Archive for February, 2012

মাতৃভাষার প্রতি গুরুত্বারোপ ও ইসলাম

সব ভাষাই আল্লাহ্‌র দান, আল্লাহ্‌র সৃষ্টি। আল্লাহ্‌ মানুষ সৃষ্টির সাথে সাথে মানুষ জাতিকে ভাষাও শিখিয়ে দিয়েছেন। প্রথম মানুষ হজরত আদম আঃ প্রসঙ্গে আল্লাহ্‌ ইরশাদ করেনঃ আর তিনি (আল্লাহ্‌) আদমকে যাবতীয় নাম শিক্ষা দিলেন। (সূরা বাকারাঃ ৩১ আয়াত) জগতে কোন বস্তুর কী নাম, কার কী কাজ, কার সাথে কার কেমন সম্পর্ক¬ প্রভৃতি সব বিষয়ের ভাষাজ্ঞান আল্লাহ্‌ আদম আঃ-কে শিক্ষা দিলেন। আল্লাহ্‌ অন্যত্র ইরশাদ করেনঃ আর রহমান-দয়াময় আল্লাহ্‌। তিনিই শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন, তিনিই সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তিনি তাকে শিক্ষা দিয়েছেন ভাষা। (সূরা আর রহমানঃ ১-৪ আয়াত)।
মা, মাতৃভূমি ও মাতৃভাষা¬ মানুষের অস্তিত্বের এ তিনটি প্রধান অবলম্বন। মানুষের জীবন হচ্ছে তার মাতৃভাষা, দেশের ভাষা, জাতির ভাষা। মানুষের যতগুলো জন্মগত অধিকার আছে সেগুলোর অন্যতম হচ্ছে মাতৃভাষার অধিকার। এ অধিকার আল্লাহই মানুষকে দিয়েছেন। তবুও বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, যুগে যুগে এই জন্মগত অধিকার হরণ করার হীন প্রচেষ্টা চলেছে আমাদের এই স্বাধীনচেতা বীর বাঙালিদের ভূখণ্ডে।মুখের ভাষা পৃথিবীতে একমাত্র মানুষকেই দেয়া হয়েছে। মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণী হিসেবে ভূষিত হওয়ার যে সকল যোগ্যতা ও গুণাবলী রয়েছে ভাষাও তার মধ্যে একটি। ১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদেরকে নিয়ে পাকিস্তান নামে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা লাভ করে। যদিও ভৌগোলিক ও ভাষাগত দিক দিয়ে ছিল ভিন্নতা। তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী তাদের স্বীয় মাতৃভাষাকে এ অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর উপর চাপিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র চালায়। তাদের এ চক্রান্তকে নস্যাৎ করতে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলার দামাল ছাত্রগোষ্ঠী মাতৃভাষার টানে রাজপথে নেমে এসেছিল। পুলিশের বুলেটের সামনেও তাদের মাতৃভাষাকে পদানত করতে দেয়নি। মাতৃভাষার এ অকৃত্রিম ভালোবাসাকে স্মৃতিময় করতে ২০০০ ইং সালে ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে বাংলাভাষাকে বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। মাতৃভাষার প্রতি এ অম্লান ভালোবাসার পূর্ণাঙ্গ স্বীকৃতি ইসলাম দিয়েছে।
মাতৃভাষার প্রতি গুরুত্বারোপ ও ইসলাম
১। আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে আসমানী কিতাবসহ অগণিত নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন মানুষকে সৎপথে পথ প্রদর্শন করার জন্য। তাদের নিকট যে ঐশ্বী বাণী দেয়া হয়েছিল তা ছিল স্বীয় মাতৃভাষায়। এ কারণেই প্রধান ৪ খানা আসমানী গ্রন্থ আরবী, ছুরিয়ানী, হিব্রু ও ইবরানী ভাষায় নাযিল করা হয়। পরোক্ষভাবে এ দ্বারা মাতৃভাষার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
২। বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর মাতৃভাষা আরবী, সে সময় আরব ভাষাভাষী বিশ্বের বুকে ছিল অপ্রতুল, তথাপিও মাতৃভাষায় আরবীতে আল্লাহ কুরআন নাযিল করেন। সাথে সাথে ইসলামী বিধি বিধান পালনের ক্ষেত্রেও মাতৃভাষা আরবীকে নির্ধারণ করা হয়। মাতৃভাষার প্রতি ইসলামের সমর্থনে এ এক উৎকৃষ্ট উপমা।
৩। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেছেন, ‘‘আমি কুরআনকে আরবী ভাষায় নাযিল করেছি এজন্য যাতে তোমরা সহজে বুঝতে পারো। (সূরা ইউসুফ-২) অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘‘আমি সকল নবীকে তাঁর স্বজাতির ভাষায় প্রেরণ করেছি যাতে তাদের নিকট সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারে। (সূরা ইব্রাহিম-১৪) আল্লাহর এ সকল বাণী মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত।
৪। আল্লাহতা’আলা মানুষকে লক্ষ করে ইরশাদ করেছেনঃ আর তাঁর নিদর্শনাবলির অন্যতম নিদর্শন হলো আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। নিশ্চয়ই এতে জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে বহু নিদর্শন। (সূরা রুমঃ ২১ আয়াত) এ আয়াতে দেখা যায়, মানুষের ভাষা ও বর্ণের বিভিন্নতা আল্লাহর সুনিপুণ সৃষ্টিকৌশলের অন্যতম সুশীলিত বহিঃপ্রকাশ। এ জন্য ভাষা-বর্ণ প্রভৃতির কারণে কোনো বিশেষ অঞ্চলের মানুষদের পর্যুদস্ত করার চেষ্টা ইসলামসম্মত নয়। ইসলামের নামে অন্যের ভাষা কেড়ে নেয়ার সুযোগ ইসলামে নেই। ইসলাম সব বর্ণের মানুষের ধর্ম। ইসলাম সব ভাষাভাষী মানুষের ধর্ম।

৫। হজরত মুহাম্মদ সাঃ পর্যন্ত প্রত্যেক জাতির জন্য অন্তত একজন করে নবী নির্দিষ্ট ছিল। (দেখুন সূরা ইউনুসঃ ৪৭ আয়াত) আর এই জন্যই প্রত্যেক রাসূলের ভাষা ছিল তাঁর জাতির তাঁর অঞ্চলের মাতৃভাষা। আল্লাহ্‌তা’আলা ইরশাদ করেনঃ আমি প্রত্যেক রাসূলকেই তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে প্রেরণ করেছি তাদের কাছে পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করার জন্য। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত করেন আর যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়, (সূরা ইবরাহিমঃ ৪ আয়াত)

৬। আল্লাহ পাক নবীজীর মাতৃভাষাতে কুরআন নাজিল করে তা সহজ করে দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অতঃপর আমরা এ কুরআনকে তোমার মাতৃভাষায় সহজ করে দিয়েছি। যাতে মুত্তাকিদেরকে এর (বেহেশতের) সুসংবাদ দিতে পার আর এর সাহায্যে কলহে লিপ্ত জাতিকে (দোজখের) ভয় দেখাতে পারো। (সূরা মারইয়ামঃ আয়াত-৯৭) আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, এটা রুহুল আমিন-জিব্রাইলের মাধ্যমে আপনার অন্তকরণে সুস্পষ্ট আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করা হয়েছে। যাতে ভয় প্রদর্শনকারী হতে পারো। (সূরা শুয়ারাঃ আয়াত ১১৩-১১৫)।

প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাস এলেই কেবল আমাদের চেতনাবোধ জাগ্রত হয়। শহীদ মিনার ধোয়ামোছা, শহীদ মিনারে প্রভাতফেরির অনুষ্ঠান, গান গাওয়া, সরকারি-বেসরকারি নানা মাত্রিক আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমেই আমরা একুশকে স্মরণ করি। একুশ আসে, একুশ যায়। একুশের চেতনা কি বছরের বাকি ১১ মাস আমাদের মাঝে জাগ্রত থাকে¬ এ প্রশ্ন অনেকের মনেই উদয় হয়। সর্বস্তরে মাতৃভাষার চর্চা এখনো কাগুজেই রয়ে গেছে, দেশের সব শিশুকে আমরা মাতৃভাষা শিক্ষা দিতে পারিনি।

বাংলা ভাষা বিশ্বের বুকে আন্তর্জাতিক ভাষা না হলেও ভাষার জন্য রক্ত ঝরানোর মত দুর্লভ ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। বর্তমান বিশ্বের অন্যান্য দেশ যদি তাদের ভাষায় সকল কিছু সফলতার সাথে সম্পাদন করতে পারে আমরা কেন পারবো না। আমরা মুসলমান হয়েও বিধর্মীয় কৃষ্টি-কালচার দ্বারা কেন প্রভাবিত হব? পরিশেষে সর্বস্তরের পেশাজীবির নিকট আহবান জানাচ্ছি আসুন সমৃদ্ধশালী একটি দেশ গড়তে মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই। সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার দ্বারা ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষায় সচেতন হই।

তথ্যসূত্রঃ

অধ্যক্ষ তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা
অধ্যাপক মাওলানা আহমদ আবুল কালাম
অধ্যাপক মাওলানা মোঃ শফিকুর রহমান
অধ্যাপক মুহাম্মদ ফরহাদ হোসেন
ও নেট

হজরত ফাতেমা (রাঃ)

হজরত ফাতেমা (রা.) ছিলেন বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সর্বাধিক প্রিয়তমা, গভীর স্নেহের পাত্রী এবং তার মনের শান্তি। তার মনের চাহিদার প্রতি বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক লক্ষ্য রাখতেন এবং তার প্রয়োজন মিটাতে এগিয়ে আসতেন। বুখারী এবং মুসলিম শরীফের হাদিসে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত ফাতেমাকে বলেন, ‘হে ফাতেমা! তুমি সন্তুষ্ট থাক, কেননা তুমি সব মুমিন নারীদের নয় বরং সব নারীর সর্দার।’
ফাতেমা আমার দেহের অংশ। যারা তাকে রাগান্বিত করবে (প্রকৃতপক্ষে) তারা আমাকে রাগান্বিত করেছে’। সহীহ আল বুখারী
‘ফাতেমা বেহেশতের নারীদের সর্দার’।সহীহ আল বুখারী
উম্মুল মোমেনিন আয়েশা, হযরত ফাতেমাকে (সা.) বললেন: নবী করিম (সা.) হতে আমি যা শুনেছি তোমাকে কি খুশি করবে না ? নবী করিম (সা.) বলতেন: “বেহেস্তের মহিলাদের সর্বশ্রেষ্ঠ হচ্ছেন চারজন: ১। মারিয়াম বিনতে এমরান; ২। ফাতেমা বিনতে মোহাম্মদ (সা.); ৩। খাদিজা বিনতে খুওয়াইলদ; ৪। আসিয়া বিনতে মোযাহেম ও ফেরাউনের স্ত্রী”।
একবার হযরত আলী দ্বিতীয় একটি বিবাহ করতে মনস্থ করলেন। মা ফাতেমা ও স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সঃ) এতে দারুণ মর্মাহত হন। মসজিদে নববীতে খুৎবাহ দেয়ার সময় তিনি বললেন মা ফাতেমা আমার কলিজার টুকরাসম। তাকে কষ্ট দেয়া আমাকেই কষ্ট দেয়া হবে। এই কথা শুনে হযরত আলী চমকে উঠলেন। তিনি দ্বিতীয় বিয়ের সংকল্প পরিত্যাগ করলেন। তাই দেখা যায় মা ফাতেমা যতদিন জীবিত ছিলেন, ততদিন হযরত আলী কখনো তাঁর সামনে রুক্ষ কথা বলেননি এবং দ্বিতীয় বিবাহও করেননি।
বিশিষ্ট লেবাননীয় সাহিত্যিক ও কবি জনাব সুলাইমান কাত্তানী , যিনি কিনা একজন অমুসলিম তার গ্রন্থের শেষাংশে লিখেছেন: ফাতেমা, হে মোস্তফার কন্যা! হে সর্বোচ্চ উজ্বল চেহারার অধিকারী যাকে পৃথিবী নিজের কাঁধে স্থান দিয়েছে, তুমি শুধুমাত্র দুইবার মুচকি হেসেছো; একবার নিজের বাবার সম্মুখে যখন তিনি মৃত্যুশয্যায়ে ছিলেন এবং তোমাকে তার সাথে অতি দ্রুত সাক্ষাতের সুসংবাদ দিলেন। আর দ্বিতীয়বার তোমার মুচকি হাসিটি তোমার সমগ্র ঠোঁটে ছড়িয়ে পড়েছিল যখন ছিল জীবনের শেষ মুহূর্তে তুমি তোমার শেষ নিঃশ্বাসটি ছেড়ে দিলে… তুমি সর্বদা ভালাবাসার সাথে জীবন যাপন করেছো, তুমি পবিত্রতার সাথে জীবন-যাপন করেছো…তুমি পৃথিবীকে উপহাসব্যাঞ্জক মুচকি হাসির সাথে পরিত্যাগ করে চিরস্থায়ী জীবনের দিকে রওনা হয়েছো। হে নবী কন্য! হে আলীর স্ত্রী! হে হাসান ও হোসাইনের মাতা, হে সকল যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ নারী’।
পৃথিবীতে এমন কয়েকজন অসাধারণ মানুষ জন্ম নিয়েছেন যাঁরা মানবজাতির চিরন্তন গৌরব, যাঁরা আদর্শ মানুষের প্রতীক তথা মানবতা ও মনুষ্যত্বের পূর্ণতার মডেল। নবী-নন্দিনী খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতেমা জাহরা (সাঃ) সেইসব অসাধারণ মানুষেরই একজন। স্নেহময়ী জননীর মত বিশ্বনবী (সাঃ)’র সেবা-যত্ন করা এবং বিপদের সময় তাঁর সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য মহীয়সী নারী ফাতিমা (সাঃ)’র অন্য একটি নাম উম্মে আবিহা বা পিতার জননী। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁকে সকল যুগের নারীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে উল্লেখ করেছেন এবং আল্লাহর দরবারে তাঁর বিশেষ মর্যাদার কারণে তাঁকে দেখলে দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করতেন।
অনেক ইসলামী বর্ণনা অনুযায়ী পবিত্র কোরআনের সূরা কাওসার-এ উল্লেখিত কাওসার বলতে হযরত ফাতেমা (সাঃ)কেই বোঝানো হয়েছে। মক্কার কাফের ও মুশরিকরা যখন বিশ্বনবী (সাঃ)কে আবতার বা নির্বংশ বলে উপহাস করতো, এবং রাসূলের ওফাতের পরই তার ধর্ম শেষ হয়ে যাবে বলে প্রচার করতো তখন এই সূরা নাজেল হয়। এ সূরায় কাফেররাই নির্বংশ হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। হযরত ফাতিমা (সাঃ) ‘র মাধ্যমে রাসূলে পাক (সাঃ)’র বংশধারা আজো অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে নির্মূল হয়ে গেছে আবু লাহাব ও আবু জাহেলদের বংশধর।
একজন পরিপূর্ণ আদর্শ মানুষ হিসেবে হযরত ফাতিমা (রাঃ) এটা প্রমাণ করেছেন যে, পরিপূর্ণতার শিখরে ওঠার জন্য নারী হওয়া বা পুরুষ হওয়া জরুরী কোনো শর্ত নয়। তিনি জন্ম নিয়েছিলেন এমন এক যুগে যখন আরবরা নারীকে মনে করতো কেবল ভোগের সামগ্রী এবং জাত্যাভিমানী আরবদের ঘরে কণ্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করলে তারা অমর্যাদার ভয়ে কণ্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দিত বা গোপনে মেরে ফেলতো । কিন্তু মহান আল্লাহ তার সর্বশেষ রাসূল ও সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানবের ঘরে একজন কন্যা সন্তান পাঠিয়ে নারী জাতির জন্য অশেষ সম্মান ও মুক্তির ব্যবস্থা করেছেন।
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগী করা ছাড়াও প্রায়ই রোজা রাখা ও গরীব-দূঃখীকে অসাধারণ মাত্রায় দান-খয়রাত করা ছিল হযরত ফাতিমা (রাঃ)’র একটি বড় বৈশিষ্ট্য। নবী-নন্দিনী (রাঃ) বলেছেন, পৃথিবীতে তিনটি জিনিস আমার খুবই প্রিয়। আল্লাহর পথে ব্যয়, রাসূলে খোদা (সাঃ)র চেহারার দিকে তাকানো এবং পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত। পবিত্র কোরআনের আয়াত শ্রবণ মুসলমানদেরকে মুক্তির তীরে পৌঁছে দেয়।
তথ্য সুত্রঃ (এডিটেড)

http://ittefaq.com.bd/content/2010/12/31/news0853.htm
http://islamibd.com/home/index.php?option=com_content&view=article&id=212:2011-05-30-05-09-01&catid=6:2009-02-05-15-10-04&Itemid=10
http://taiyabs.com/islam/?p=830
http://bangla.irib.ir/index.php/2010-04-22-08-00-01/2010-04-22-08-01-54/11313——–.html

তোমার কালিমার বুঝ আর আমার কালিমার বুঝ এক নয়

মিশরের শীর্ষ ইসলামিক ব্যক্তিত্ব আল্লামা সায়্যিদ কুতুব রহ. কে কালিমা তাইয়্যিবার ব্যাখ্যা লেখা ও ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথা সংবলিত একটি কিতাব লিখার কারণে তৎকালীন মিসরের স্বৈর শাসক তাকে ফাঁসি দিয়ে শহীদ করেছিলো। ফাঁসির আগের রাতে সায়্যিদ কুতুব রহ. কে কালিমা পড়ানোর জন্য জেলের ইমামকে পাঠানো হলো। জেলের ইমাম এসে আল্লামা সায়্যিদ কুতুব রহ. কে কালিমার তালকিন দেয়ার চেষ্টা করতে লাগলেন। তাকে দেখে সায়্যিদ কুতুব জিজ্ঞাসা করলেন আপনি কি জন্য এখানে এসেছেন?
ইমাম বললেন, আমি আপনাকে কালিমা পড়াতে এসেছি। মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার আগে আসামীকে কালিমা পড়ানো আমার দায়িত্ব।
সায়্যিদ কুতুব বললেন, এই দায়িত্ব আপনাকে কে দিয়েছে?
ইমাম বললেন, সরকার দিয়েছে।
সায়্যিদ কুতুব বললেন, এর বিনিময়ে কি আপনি বেতন পান?
ইমাম বললেন, হ্যাঁ আমি সরকার থেকে বেতন-ভাতা পাই।
তখন সায়্যিদ কুতুব রহ. সেই ইমাম সাহেবকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি জানেন কি কারণে আমাকে ফাঁসি দেয়া হচ্ছে?
ইমাম বললেন, না বেশি কিছু জানি না।
সায়্যিদ কুতুব বললেন, আপনি আমাকে যেই কালিমা পড়াতে এসেছেন, সেই কালিমার ব্যখ্যা লেখার কারণেই তো আমাকে ফাঁসি দেয়া হচ্ছে। কি আশ্চর্য! যেই কালিমা পড়ানোর কারণে আপনি বেতন-ভাতা পান সেই কালিমার ব্যখ্যা মুসলিম উম্মাহকে জানানোর অপরাধেই আমাকেই ফাসি দেয়া হচ্ছে। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে, আপনার কালিমার বুঝ আর আমার কালিমার বুঝ এক নয়। আপনার কোন প্রয়োজন নেই।”

এটাই হলো চরম বাস্তবতা। আমাদের আজকের সমাজেও দেখা যায়, অনেকেই তোতা পাখির মতো বুলি আওড়ানো কালিমার দাওয়াত দিচ্ছেন কিন্তু তারা কোন বাঁধার সম্মুখীন হন না। চতুর্দিক থেকে কেবল নুসরাত আর নুসরাত পাচ্ছেন।
বর্তমান জালিম শাসকরাও আজ কুরআনের ব্যখ্যা দিচ্ছে। তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য অনেক নাম ধারা উলামায়ে কিরামও দীন প্রচার করছে। কিন্তু যেই কালিমা তাইয়্যিবা এক আল্লাহর সর্বময় ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের বাণী শোনায়, যেই কালিমার অনুসারীদের জন্য মানবরচিত সকল শাসন ব্যবস্থার অধীনে থাকা হারাম হয়ে যায়, যেই কালিমার বাণী মক্কায় প্রচার করার কারণে চতুর্দিক থেকে প্রিয়নবী সা. বাঁধার সম্মুখীন হয়েছিলেন, সেই একই কালিমা আজ সমাজে প্রচার করা হচ্ছে তার মূল আহ্বান আর মর্মকে বিলুপ্ত করে। যার ফলে যে কালিমা বলছে সে নিজেও বুঝে না যে সে কি বলছে আর যার কাছে কালিমার দাওয়াত দিচ্ছে সে কালিমার দাওয়াতও গ্রহণ করছে আবার গণতন্ত্র-সমাজতন্ত্রসহ মানব রচিত শাসন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করছে।

সুতরাং বোঝা যাচ্ছে যে এই কালিমা এবং ইসলামের মূল ভিত্তিই আজ বিপর্যস্ত হওয়ার পথে। মহান আল্লাহ আমাদেরকে কালিমার সঠিক ব্যখ্যা জানার এবং বুঝার তাওফীক দিন। আমীন।

By blogger মাই নেম ইজ খান

সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ

ইহকালীন জীবনে যেসব সৎ কাজ রয়েছে, সেগুলো যথাযথভাবে নিজে পালন করা ও অন্যকে পালন করার জন্য সদুপদেশ প্রদান করা এবং দুনিয়ায় যেসব অসৎ কাজ রয়েছে, সেগুলো থেকে নিজে বিরত থাকা ও অন্যকে বিরত রাখাই হলো মানবজীবনে উন্নতির উপায়। মানুষ দুনিয়ায় সত্য কথা বলবে, আমানত রক্ষা করবে, ওয়াদা পালন করবে। শুধু নিজেই এগুলো মেনে চললে হবে না, অপরকেও এসব সৎ কাজ পালন করার জন্য উপদেশ দিতে হবে। পক্ষান্তরে সে মিথ্যা বলা থেকে দূরে থাকবে, কারও গিবত তথা পরচর্চা ও পরনিন্দা করবে না, কারও গচ্ছিত সম্পদ নষ্ট বা আত্মসাৎ করবে না। ঘুষ, দুর্নীতি, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, সন্ত্রাস, বোমাবাজি প্রভৃতি সামাজিক অনাচার বর্জন করবে এবং এসব অসৎ কাজ থেকে দূরে থাকার জন্য অন্য ব্যক্তিদেরও সদুপদেশ দেবে।
এ মর্মে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন একদল লোক হোক, যারা মানুষকে কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে, সৎ কাজের আদেশ দেবে এবং অসৎ কাজে নিষেধ করবে, আর তারাই সফলকাম।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত-১০৪)
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে হজরত লুকমান (আ.)-এর সদুপদেশ ব্যক্ত করে ইরশাদ করেছেন, ‘হে আমার বৎস! তুমি নামাজ প্রতিষ্ঠা করো, সৎ কাজের আদেশ দাও, মন্দ কাজ হতে বিরত রাখো এবং বিপদ-আপদে ধৈর্যধারণ করো, নিশ্চয়ই এটা দৃঢ়সংকল্পের কাজ।’ (সূরা লুকমান, আয়াত-১৭)

পথভোলা মানুষকে সঠিক পথ প্রদর্শনের জন্য যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসুলকে পাঠিয়েছেন এবং মানবতার কল্যাণের জন্য ঐশী ধর্মগ্রন্থ তথা আসমানি কিতাব নাজিল করেছেন। ইসলামের দৃষ্টিতে সৎ কাজ মানে ভালো কাজ, যেসব কাজ আল্লাহ ও তাঁর রাসুল পছন্দ করেন, যাতে বিশ্বমানবতার কল্যাণ সাধন হয়।বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পরে আর কোনো নবী আসবেন না, কোনো ঐশী ধর্মগ্রন্থও আসবে না। তাই সৎ কাজের আদেশ দান এবং অসৎ কাজে নিষেধ করার দায়িত্ব সর্বশেষ নবীর উম্মতের ওপর পড়েছে। এটি উম্মতে মুহাম্মদীর বৈশিষ্ট্য ও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
রাসুলুল্লাহ (সা.) সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছেন, ‘কোনো মুসলমান যদি কাউকে অন্যায় করতে দেখে, তবে হাতে বল প্রয়োগে ফেরাবে, যদি সে সামর্থ্য না থাকে তবে মুখে সে অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে, যদি সে সামর্থ্যও না থাকে তাহলে মনে মনে খারাপ জানবে। আর এটাই দুর্বলতম ঈমানের পরিচায়ক।’ (মুসলিম)

মানুষকে সৎ কাজের আদেশ দিতে হলে আগে নিজে সৎ হতে হবে, তা না করা হলে সুফল পাওয়া যাবে না। অনুরূপভাবে অপরকে অসৎ কাজে নিষেধ করলে আগে নিজে অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। নিজে অসৎ হয়ে অন্যকে অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখা যায় না। তাই আসুন, দশে মিলে কল্যাণকর সৎ পথের সন্ধানে নিজেদের ব্যাপৃত করি।

ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ অ্যান্ড দাওয়াহ, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়।
dr.munimkhan@yahoo.com