মানুষ সৃষ্টির পর মহান আল্লাহতাআলা অন্যসব সৃষ্টিকে তার কল্যাণে নিয়াজিত হওয়ার আদেশ দেন। মানবজাতির আদি পিতা হযরত আদম (আ:)কে সৃষ্টি করে ফেরেশতাদের তাঁকে সম্মান জানাতে নির্দেশ দান করেন এবং মানুষকে চিরদিনের জন্য সম্মানের দিক দিয়ে ফেরেশতাদের ঊর্ধ্বে রাখেন।
অত:পর মানবজাতির প্রতি মহান আল্লাহতা’আলা এমন এক নির্দেশ দান করেন যে, যারা আমার বিধান (আইন-কানুন) মেনে চলবে, পৃথিবীতে তাদের কোনো প্রকার দু:খ-কষ্ট ও অশান্তি হবে না। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, ‘অত:পর যখন আমার পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট কোনো হেদায়েত (পথ নির্দেশনা) আসবে, তখন যারা আমার হেদায়েত মত চলবে তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দু:খিত হবে না।’ (সূরা বাকারা-৩৮)
বিশ্বে শান্তির প্রয়াসে মহান রাব্বুল আলামীন তাঁর মহান বাণীসমূহে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে সংমিশন্সণ করো না এবং জেনে-শুনে সত্য গোপন করো না।
(সূরা বাকারা-৪২)
এবং তোমরা একে-অন্যের ধন সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং মানুষের ধন সম্পদের কিয়দংশ জেনে-শুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে বিচারকগণকে উৎকোচ (ঘুষ) দিও না। (বাকারা-১৮৮)
তোমরা বিনীতভাবে ও গোপনে তোমাদের প্রতিপালককে ডাকো, তিনি সীমালংঘনকারীদের পছন্দ করেন না। পৃথিবীতে শান্তি স্খাপনের পর ওতে তোমরা বিশৃংখলা সৃষ্টি করো না। তাকে (আল্লাহকে) ভয় ও আশার সঙ্গে ডাকো। নিশ্চয়ই আল্লাহর অনুগ্রহ সৎকর্ম পরায়ণদের নিকটবর্তী।’ (সূরা আ’রাফ-৫৫-৫৬)
‘আল্লাহ যা তোমাকে দিয়েছেন তা দিয়ে পরকালের কল্যাণ সন্ধান কর। ইহকালে তোমার বৈধ সম্ভোগকে তুমি উপেক্ষা করে না। তুমি সদাশয় হও, যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি সদাশয় এবং পৃথিবীতে বিশৃংখলা সৃষ্টি করতে চেয়ো না। আল্লাহ অবশ্যই বিশৃংখলা সৃষ্টিকারীদেরকে ভালবাসেন না। (সূরা কাসাস-৭৭)
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নির্দেশ-‘আল্লাহ অবশ্যই ন্যায় পরায়ণতা, সদাচরণ ও আত্মীয় স্বজনকে দানের নির্দেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসৎকার্য ও সীমালংঘন নিষেধ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করো। তোমরা আল্লাহর
নামে অঙ্গীকার করলে (ওয়াদা) অঙ্গীকার পূর্ণ করো এবং তোমরা আল্লাহকে তোমাদের জামিন করে প্রতিজ্ঞা দৃঢ় করার পর তা ভঙ্গ করো না। অবশ্যই আল্লাহ তোমরা যা করো তা জানেন। তোমাদের নিকট যা আছে তা থাকবে না এবং আল্লাহর নিকট যা আছে তা স্খায়ী থাকবে। যারা ধৈর্যশীল আল্লাহ নিশ্চয়ই তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার তাদের দান করবেন। বিশবাসী হয়ে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎ কর্ম করবে তাকে আমি অবশ্যই আনন্দপূর্ণ জীবন দান করবো এবং তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার তাদের দান করবো। যারা সাবধানতা অবলম্বন করে এবং যারা সৎকর্মপরায়ণ, আল্লাহ অবশ্যই তাদের সঙ্গে আছেন।
(সূরা নাহল-৯০, ৯১, ৯৬, ৯৭ ও ১২৮ আয়াত)।
সুবিচারের অভাবে অনেক জাতি ও দেশ ধ্বংস হয়েছে। এ সম্পর্কে মহানবী (সা:) এর একটি হাদীস খুবই প্রণিধানযোগ্য। হযরত বরীদাহ (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, নবী করীম (সা:) ইরশাদ করেছেন, তিন প্রকার বিচারক রয়েছে। তন্মধ্যে একজন মাত্র বেহেশতে যেতে পারবে। অপর দু’জন জাহান্নামে যেতে বাধ্য হবে। যে বিচারক বেহেশতে যাবে সে এমন ব্যক্তি, যে প্রকৃত সত্যকে জানতে পেরেছে, অত:পর তদনুযায়ী বিচার ও ফয়সালা করেছে। যে ব্যক্তি প্রকৃত সত্যকে জানতে পেরেও ফয়সালা করবার ব্যাপারে অবিচার ও জুলুম করেছে, সে জাহান্নামে যাবে। আর যে ব্যক্তি অজ্ঞতা সত্ত্বেও জনগণের জন্যে বিচার ফয়সালা করেছে, সেও জাহান্নামী হবে। (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)
অর্থাৎ আল্লাহ অশ্লীলতা, অসৎ কর্ম ও সীমা লংঘন করতে নিষেধ করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন, জুলুম ব্যতীত এমন কোন গোনাহ নেই যার বিনিময়ও শাস্তি দ্রুত দেয়া হবে। এতে বোঝা যায় যে, জুলুমের কারণে পরকালীন শাস্তি কঠোর তো হবেই এর পূর্বে দুনিয়াতে ও আল্লাহ তা আলা জালেমকে শাস্তি দেন। যদিও সে বুঝতে পারে না যে, এটা অমুক জুলুমের শাস্তি। আল্লাহ তাআলা মজলুমের সাহায্য করারও অঙ্গীকার করেছেন। পৃথিবীতে আল্লাহর বিধান লংঘনীয়। সত্যকে সত্য বলা এবং মিথ্যাকে পরিহার করা ফরজ। ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ করাও অবশ্য কর্তব্য। এই যদি মানব জীবনে বাস্তবায়িত হয়, তবে পৃথিবীতে কারো জীবনে দু:খ কষ্ট ও চিন্তা-ভাবনা থাকতে পারে না। সৎকর্মীশীলদের জন্য আল্লাহ তাআলা পুরস্কারও ঘোষণা করেছেন। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, নিশ্চয়ই যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের আপ্যায়নের জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফেরদাউস, সেখানে তারা চিরস্খায়ী হবে। (সূরা কাহ্ফ-১০৭ আয়াত)
তিনি আরো বলেন, যে সৎকর্ম করে, সে নিজের কল্যাণের জন্যেই তা করে এবং যে মন্দ কাজ করে তার শাস্তি সেই ভোগ করবে। (সূরা হা মীম সাজদা-৪৬) হে মহান রাব্বুল আলামীন, দেশের সকল শ্রেণীর লোকদের ন্যায় বিচারে উদ্বুদ্ধ হয়ে, অন্যায় ও অসৎকর্ম থেকে বিরত থেকে জাতিকে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে গড়ে তোলা ও পরিচালনার শক্তি সামর্থ্য ও সাহসী ভূমিকা পালন করার ইচ্ছা শক্তিদান করুন। আমীন।
Link http://mamunmck.wordpress.com/amarsoggroho/banglakitab/islamijaga/bidanloggonkar/