Archive for the ‘General’ Category

খুতবা সানি বা দ্বিতীয় খুতবার বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ

আলহামদুলিল্লাহি আস্তা’ইনুহু ওয়া আস্তাগফিরুহুনিশ্চয় প্রশংসা আল্লাহর। আমরা তাঁর কাছে সাহায্য ও ক্ষমা চাই।
ওয়া নাউ’যুবিল্লাহি মিন শুরুরি আনফুসিনাআমরা আমাদের নিজেদের নাফসের ক্ষতি হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই
ওয়ামিন সায়্যিআ-তি আ’মালিনাএবং আমাদের খারাপ কর্মগুলো
মাইয়্যাহদিল্লাহু ফালা মুদিল্লালাহ।আল্লাহ যাকে হিদায়াত দেন কেউ তাকে পথভ্রষ্ট করতে পারে না।
ওয়া মা-ইয়্যুদলিল ফালা হাদিয়া লাহুআর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তাকে কেউ হিদায়াত করতে পারে না।
ওয়া আশ-হাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহুআমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নাই।
ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহু ওয়া রাসুলুহুআমি আরো সাক্ষ্য দিচিছ যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রসূল।
আরসালাহু বিল হাক্কি বাসিরও ওয়া নাযিরা  বাইনা ইয়াদাইয়্যিস্ সা’আতি মাইয়্যুতি ‘ইল্লাহা ওয়া রসুলাহু ফাক্বদরসাদা ওয়া মাইয়্যা’তিহিমা ফা ইন্নাহু লা ইয়া ইয়াদুররু ইল্লা নাফসাহ। ওয়ালা ইয়া ইয়াদুররু ল্লাহা সাইয়্যা। আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতনির রজীম।মহান আল্লাহ তাঁকে কিয়ামতের পূর্বে সত্য দ্বীনসহ সুসংবাদ দাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী হিসেবে পাঠিয়েছেন। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে সে সঠিক পথে রয়েছে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের অবাধ্য হয় সে তো নিজেরই ক্ষতি সাধন করে, সে আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারে না।
ইন্নাল্লাহা ওয়া মালা-ইকাতাহু ইউসল্লুনা আলান্নাবিয়্যি ইয়া আইয়্যুহাল্লাযিনা আমানু সল্লু ‘আলাইহি ওয়া সল্লিমু তাসলিমানিশ্চয় আল্লাহ (ঊর্ধ্ব জগতে ফেরেশতাদের মধ্যে) নবীর প্রশংসা করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর জন্য দো‘আ করে*। হে মুমিনগণ, তোমরাও নবীর উপর দরূদ পাঠ কর এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও। 
আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিন ‘আবদিকা ওয়া রসুলিকা ওয়া সল্লি ‘আলাল মু-মিনি-না ওয়াল মু-মিনাতি ওয়াল মুসলিমিনা ওয়াল মুসলিমাতি ওয়া বারিক ‘আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আযওয়াজিহীহে আল্লাহ! তোমার বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদকে দয়া করো এবং মুমিন নারী-পুরুষ ও মুসলিম নারী-পুরুষ সকলকে দয়া করো/ হযরত মোহাম্মদ সাঃ  তাঁর সহধর্মিনী ও সন্তান সন্ততিদের উপর বরকত দান করো  
ক্ব-লান্নাবিয়্যু সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম: আরহামু উম্মাতি বি উম্মাতি আবু-বকর। ওয়া আশাদ্দুহুম ফি আমরিল্লাহি ‘উমরু ওয়া আসদাক্বহুম হাইয়ান উছমানু ওয়া আক্বদহুম ‘আলিবিশেষ করে রহম করুন, সাহাবিদের সেরা কোমলমতি আমিরুল মুমিনীন সায়্যেদিনা আবু বরক ছিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহুর ওপর। ন্যায় ও স্পষ্টবদী আমিরুল মুমিনীন সাইয়্যেদিনা ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর ওপর। কোরআনে সংগ্রাহক , লজ্জাশীল ও দৃঢ় বিশ্বাসী আমীরুল মুমিনীন সাইয়্যেদিনা ওছমান ইবনে আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহুর ওপর। শ্রেষ্ঠ বিচারক আমিরুল মুমিনীন আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুর ওপর দরুদ ও সালামের ধারা যেন বিরাজ থাকে।
ওয়া ফাতিমাতু সায়্যিদাতু নিসা-ই আহলিল জান্নাতি ওয়াল হাসানু ওয়াল হুসাইনু সায়্যিদা শাবাবি আহলিল জান্নাহতাছাড়া শান্তির প্রতীক জান্নাতের যুবকদের সরদার হযরত সাইয়্যেদেনা আবু মুহাম্মদ হাসান ও আবু আবদুল্লাহ হোসাঈন রাদিয়াল্লাহু আনহুমার ওপর রহমত বর্ষিত হোক। তাদের মাতা জান্নাতের নারীদের সর্দার সাইয়্যেদেনা হজরত ফাতেমাতুজ্জোহরা রাদিয়াল্লাহু আনহার ওপর রহমত ও সালাম বর্ষিত হোক।
ওয়া হামযাতু আসাদুল্লাহি ওয়া আসাদু  রসু-লিহি।আল্লাহুম্মাগফিরলিল ‘আব্বাসি ওয়া ওয়ালিদিহী মাগফিরাতিন যহিরাতাও ওয়া বাত্বিনাতাল্ লা তুগাদিরু যানবান  আর নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দুই চাচা যাঁরা আল্লাহর ও মানুষের কাছে সম্মানিত , আবিলতা ও অপরিচ্ছন্নতা থেকে পবিত্র , সেই হজরত হামজা এবং হজরত আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর ওপর রহমত বর্ষিত হোক। তার সন্তানদের সকল গুনাহ মাফ করুন য্রন একটি গুনাহও বাদ না পরে।
আল্লাহা আল্লাহা ফি আসহাবি লা তাত্তাখিযুহুম গারদাম্ মিন বাগদি ফামান আহাব্বাহুম ফাবিহুব্বি আহাব্বাহুম ওয়া মিন আবগদাহুম ফাবিবুগদি আবগদাহুমঅর্থাৎ-সাবধান!তোমরা আমার সাহাবীগণের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। আমার পরে তোমরা তাঁদেরকে (তিরস্কারের) লক্ষ্যবস্তু বানাইও না। যে ব্যক্তি তাঁদের প্রতি ভালোবাসা পোষণ করে সে আমার প্রতি ভালোবাসা বশেই তাঁদেরকে ভালোবাসে। আর যে ব্যক্তি তাঁদের প্রতি শত্রুতা ও বিদ্বেষ পোষণ করে সে আমার প্রতি বিদ্বেষবশতঃ তাঁদের প্রতি শত্রুতা ও বিদ্বেষ পোষণ করে
ওয়াখইরু উম্মাতি ক্বারনি ছুম্মাল্লাযিনা ইয়ালুনাহুম ছুম্মাল্লাযিনা ইয়ালুনাহুমআমার যুগ সর্বশ্রেষ্ঠ অতঃপর পরের যুগ, তারপর তারপরের যুগ”
  
 
ওয়াস্ সুলত্বনু যিল্লিল্লাহি ফিল আরদি মান আহানা সুলত্বনাল্লাহি ফি-ল আরদি আহানাহুল্লাহুন্যায়বিচারক রাষ্ট্রনায়ক পৃথীবীতে আল্লাহর ছায়াস্বরুপ। যে ব্যক্ত্রি আল্লাহর নিয়োজিত রাষ্ট্রনায়ক অপমান করবে আল্লাহ তাকে অপমান করবেন
আল্লাহুম্মা আইজ্জাল-ইসলামা ওয়াল-মুসলিমীন, ওয়া আযিল্লাশ-শিরকা ওয়াল-মুশরিকীন, ওয়া দামির আ’দা‘আদ-দ্বীন, ওয়াহমি হাওযাতাল-ইসলামী ইয়া রাব্বাল-আলামীন।হে  আল্লাহ, ইসলাম ও মুসলমানদের লালন কর, শিরক ও মুশরিকদের লাঞ্ছিত কর, ধর্মের শত্রুদের ধ্বংস কর এবং ইসলামের অধিকার রক্ষা কর, হে সমস্ত জাহানের প্রতিপালক।
ইবাদাল্লাহ রাহিমাকুমুল্লাহহে আল্লাহর বান্দার তোমাদের উপর আল্লার রহমত বর্ষিত হোক
ইন্নাল্লাহা ইয়ামুরু বিল ‘আদলি ওয়াল ইহসানি ওয়ায়্যিতা-ই যিল ক্বুরবা- ওয়ানহা আনিলফাহসা-ই ওয়াল মুনকার ওয়াল-বাগয়্যি ইয়া‘ইজুকুম লা’আল্লাকুম তাযাক্কারুনআল্লাহ ন্যায়-বিচার, সদাচরণ ও আত্মীয়দেরকে দেয়ার হুকুম দিচ্ছেন এবং তিনি আশ্লীলতা, মন্দ কাজ ও সীমালঙ্ঘন থেকে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর।
ইয়ামুরু আদেশ| ওয়ায়্যিতা-ই দান করা | যিল ক্বুরবা- নিকট আত্নীয়-স্বজন | ওয়ানহা এবং নিষেধ করেন | ‘আনিলফাহসা-ই অশ্লীলতা | মুনকার অসৎ কাজ | বাগয়্যি সীমালঙ্ঘন | ইয়া‘ইজুকুম তিনি উপদেশ দিচ্ছেন  লা’আল্লাকুম তাযাক্কারুন যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহন করো
ফাযকুরুনি আযকুরুকুম ওয়াশ কুরুলি ওয়ালা তাকফুরুন।সুতরাং তোমরা শুধু আমাকেই স্মরণ করো ,আমিও তোমাদিগকে স্মরণ করবো । তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও এবং কৃতঘ্ন হইওনা ।

ঈমান পর্ব-শেষ পর্ব

শেষ প্রার্থনা

 

হে আমাদের প্রতিপালক! নিশ্চয় আমরা একজন আহ্বানকারীকে ঈমানের দিকে আহ্বান করতে শুনেছি (এই বলে) যে, ‘তোমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আন,’ সুতরাং আমরা ঈমান এনেছি। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করুন, আমাদের পাপসমূহ মোচন করুন এবং আমাদেরকে পুণ্যবানদের সঙ্গে মৃত্যু দান করুন। (সূরাহ্‌ আলি ‘ইমরান ৩:১৯৩)

 

ঈমান মানে কি শুধু বিশ্বাস?  ফিরআউন আল্লাহকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করত। কোন সাধারন মানুষের কি আল্লাহর উপর শয়তানের থেকে বেশি বিশ্বাস আছে?? শুধু বিশ্বাস করাটাই যদি ঈমান হয়, তাহলে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই মুমিন। কিন্তু মুমিন হওয়া কি এত সহজ? একবার কিছু সাহাবী ইসলামে প্রবেশ করে নিজেদের মুমিন বলছিলেন। তখন তাদেরকে বলা হল যে, তোমরা নিজেদেরকে মুমিন বল না, বল যে তোমরা ইসলামে প্রবেশ করেছ।

আল্লাহ সোবহানাতায়ালা বলেন

এই লোকেরা মনে করে যে, তারা ইসলাম কবূল ক’রে তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছে। তাদেরকে বলে দাও, ‘তোমরা তোমাদের ইসলাম কবূলের দ্বারা আমার প্রতি কোন অনুগ্রহ করনি বরং আল্লাহই তোমাদেরকে ঈমানের পথে পরিচালিত ক’রে তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, তোমরা যদি (তোমাদের ঈমান আনার দাবীতে) সত্যবাদী হয়েই থাক।[৪৯] আলহুজরাত : ১৭

মৃত্যুর পর যে অনন্ত জীবন রয়েছে এবং সে জীবনে সূখী হতে হলে কিছু করা প্রয়োজন সে ব্যাপারে এত উদাসীনতার প্রধান কারণ হলো দৃঢ় বিশ্বাসের অভাব। চাকুরীজীবীরা সারা মাস সময়জ্ঞান বজায় রেখে কাজ করে যায় কারণ তার দৃঢ় বিশ্বাস আছে মাস শেষে বেতন পাওয়া যাবে। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও উন্নত দেশে মানুষ পাড়ি জমায় কারণ তার দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে সেখানে গেলে বাকি জীবন সুখে-শান্তিতে কাটাতে পারবে। মানুষ আল্লাহকে তখনি বিশ্বাস করে, যখন সে নিজে থেকে উপলব্ধি করতে পারে যে, তিনি সত্যিই আছেন। ঈমানে দুর্বলতা থাকলে ইবাদতে আগ্রহ থাকবে না। আল্লামা কাশ্মীরি রহ. বলেন, “ঈমান অন্তরের আমল। যেমনটা ইমাম বুখারি রহ. বলেছেন “দ্বীনের প্রতিটি হুকুম অন্তরে গ্রহণ করা এবং তার ওপর আমল করার দৃঢ়প্রতিজ্ঞা ঈমানের জন্য অপরিহার্য।” মানুষকে কিছু যুক্তি-প্রমাণ দেখালেই তারা আল্লাহর উপর পুরোপুরি বিশ্বাস করা শুরু করে দেয় না এবং তাদের জীবনকে পাল্টিয়ে ফেলে না। ঈমান একটি দীর্ঘ সফর, যার গন্তব্যে শুধু তর্ক করে পৌঁছা যায় না।

হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে আর আমাদের ভাইদেরকে ক্ষমা কর যারা ঈমানের ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রবর্তী হয়েছে, আর যারা ঈমান এনেছে তাদের ব্যাপারে আমাদের অন্তরে কোন হিংসা বিদ্বেষ রেখো না। হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি বড়ই করুণাময়, অতি দয়ালু।’[৫৯] আল হাশর : ১০

 

সংগৃহীত ও সংকলিত

ঈমান পর্ব-৫

ঈমানের স্বাদ অনুভব

যার মধ্যে তিনটি বৈশিষ্ট্য থাকবে সে ওই বৈশিষ্ট্যগুলো কারণে ঈমানের স্বাদ অনুভব করতে পারবে। সে বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে-ক. যারা নিকট আল্লাহ্‌ ও তার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  অন্য সবকিছু হতে সর্বাধিক প্রিয় হবে।

খ. যে ব্যক্তি কোনও বান্দাকে কেবল আল্লাহ্‌ তা‘আলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ভালোবাসবে।

গ. যে ব্যক্তি আল্লাহর অনুগ্রহে কুফ্‌র হতে মুক্তি লাভের পর পুনরায় কুফ্‌রীতে ফিরে যাওয়াকে এভাবে অপছন্দ করে, যেভাবে অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে অপছন্দ করে। (সহীহ্‌ বুখারী: ২১, সহীহ্‌ মুসলিম:৪৩)

আপনার আমার ঈমান কত দামি জানতে চান ??

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীদেরকে জিজ্ঞেস করলেন তোমাদের মতে ঈমান আনার ব্যাপারে সর্বোত্তম কে? তারা বললেন ফেরেশতাগন। তিনি বললেন তারা কেন ঈমান আনবে না? তারা তো প্রভুর নিকটেই রয়েছে। সাহাবীগন বললেন তারপর নবীগন। তিনি বললেন তারা কেন ঈমান আনবে না? তাদের উপর তো ওহী অবতীর্ন হয়ে থাকে। তারা বললেন তাহলে আমরা। তিনি বললেন তোমরা ঈমান কেন কবুল করবে না না? আমি তোমাদের মধ্যেই বিদ্যমান রয়েছি। জেনে রেখো, আমার মতে সর্বোত্তম ঈমানদার হবে তারাই যারা তোমাদের পরে আসবে।  আবু উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা ইসলাম গ্রহণ করেছি, আপনার সাথে জিহাদ করেছি, আমাদের থেকে উত্তম কি কেউ আছে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “হ্যাঁ, তারা তোমাদের পরে এমন একটি জাতি, যারা আমাকে না দেখে আমার উপর ঈমান আনবে [সুনান দারমী: ২/৩০৮, মুস্তাদরাকে হাকিম: ৪/৮৫]

কোন ঈমান আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য নয়

আল্লাহ তাআলা বলেন,

‘জেনে রেখো! অবিমিশ্র আনুগত্য শুধু আল্লাহরই প্রাপ্য।’  [৩৯] আল-যুমার : ৩

যারা কুফর ও আল্লাহর অবাধ্যাচরণে, পাপাচরনে নিমজ্জিত থাকে,তাদের সত্য গ্রহণের প্রাকৃতিক ক্ষমতা হারিয়ে যায়। তারা তাদের চোখ খুললেও তখন খুলে, যখন আল্লাহর শাস্তি তাদের মাথার উপর এসে পড়ে। আর তখন সেই ঈমান আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হয় না।

আল্লাহ বলেন-

অতঃপর ওরা যখন আমার শাস্তি প্রত্যক্ষ করল, তখন বলল, ‘আমরা এক আল্লাহতেই বিশ্বাস করলাম এবং আমরা তাঁর সঙ্গে যাদেরকে অংশী করতাম তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করলাম। অতঃপর তাদের এ ঈমান তাদের কোন উপকারে আসল না, যখন তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করল।” (সূরা মু’মিন ৪০;৮৪-৮৫ আয়াত)

সংগৃহীত ও সংকলিত

ঈমান পর্ব-৪ ছবর

‘সবর’ নিয়ে আমাদের মধ্যে ভুল ধারনা আছে। আমাদের জীবনে যখন কোনো বড় বিপদ আসে, কষ্টে চারিদিকে অন্ধকার দেখতে থাকি, তখন মুরব্বিদেরকে বলতে শোনা যায়, “সবর করো, সব ঠিক হয়ে যাবে।” দেশে-বিদেশে মুসলিমদেরকে মেরে শেষ করে ফেলা হচ্ছে, কু’রআন পোড়ানো হচ্ছে, রাস্তাঘাটে টুপি-দাড়িওয়ালা কাউকে দেখলে পেটানো হচ্ছে, আর মসজিদের ইমামদেরকে জুমুআহ’র খুতবায় বলতে শোনা যাচ্ছে, “সবর করেন ভাই সাহেবরা। সব ঠিক হয়ে যাবে। ইসলামের বিজয় নিকটেই—ইন শাআ আল্লাহ।” ব্যাপারটা এমন যে, আমরা ধৈর্য নিয়ে চুপচাপ বসে থেকে শুধু নামাজ পড়লেই আল্লাহ تعالى আমাদের হয়ে আমাদের সব সমস্যার সমাধান করে দিবেন। এই বহুল প্রচলিত ভুল ধারণাগুলোর মূল কারণ হচ্ছে ‘সবর’ শব্দের অর্থ ঠিকমত না জানা।

সবর শব্দটির সাধারণত অর্থ করা হয়: ধৈর্য ধারণ করা। কিন্তু সবর অর্থ মোটেও শুধুই ‘ধৈর্য ধারণ করা’ নয় যে, আমরা হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকব, অত্যাচার মুখ বুঝে সহ্য করে যাব, অবস্থার পরিবর্তনে কিছুই করব না, এই ভেবে যে, একদিন আল্লাহ تعالى সব ঠিক করে দিবেন। সবর এর অর্থ হচ্ছে: প্রতিকূলতার মধ্যে ধৈর্য নিয়ে, লক্ষ্য ঠিক রেখে, অবস্থার পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা করা। সবরের তিনটি অংশ রয়েছে: ১) ধৈর্যের সাথে কষ্ট, দুর্ভোগ সহ্য করা, ২) অবস্থার পরিবর্তন করতে গিয়ে কোনো পাপ করে না ফেলা, ৩) আল্লাহর تعالى আনুগত্য থেকে সরে না যাওয়া। 

মানুষ সাধারণত সবর বলতে প্রথমটিকেই বুঝে থাকে। কিন্তু একজন মুসলিমের জন্য এই তিনটিই বাধ্যতামূলক। সবর করা সহজ কাজ নয়। আজকের প্রতিকুল পরিবেশে আল্লাহর تعالى প্রতি আস্থা, বিশ্বাসে অটল থাকা খুবই কঠিন কাজ। ধৈর্যের সাথে কষ্টের সময় পার করা, অবস্থার পরিবর্তনে চেষ্টা করে যাওয়া বড়ই কঠিন। আর তাই মুসলিমদের প্রায়ই দেখা যায় বিপদে পড়লে প্রশ্ন করতে, “কেন? আমার এত বিপদ হবে কেন? আমি নামাজ পড়ি, রোজা রাখি, কত গরিবের উপকার করি। তাহলে আমার এরকম কঠিন অসুখ হয় কেন? আমার পরিবারে এত অশান্তি কেন? আমার বন্ধুরা তো দেখি কত ভালো আছে। ওরা তো নামাজও ঠিকমতো পড়ে না। সারাদিন ফুর্তি করে বেড়ায়। তাহলে আমার কপালে এত কষ্ট কেন?” —এগুলো হচ্ছে ঈমান হারিয়ে ফেলার পূর্বাভাস এবং আল্লাহর تعالىদেওয়া পরীক্ষা ঈমানের সাথে পাশ না করে ফেল করার লক্ষণ। পরিতাপের বিষয় এই যে আমরা নিজেদের পরীক্ষাকে তুলনা করছি তাদের সাথে, যারা টাকা-পয়সা, বংশ মর্যাদা, ডক্টরেট ডিগ্রি, রাজা-বাদশা হওয়া ইত্যাদিকে শ্রেষ্ঠ মানুষ হবার নিয়ামক বলে গন্য করে। আর এই বিশ্বাস থেকে তারা সুদ, ঘুষ বা দূর্নিতি করতে কোন দ্বিধা করছে না। অফিসের ছোট কর্তাকে ঘুষ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে জবাব আসে বড় কর্তায় খায়, আমার না খেয়ে উপায় নেই। ব্যবসায়ীকে সততার কথা বললে জবাব আসে সৎ পথে ব্যবসা করলে চালান টেকানো দায়। হত্যা খুন সন্ত্রাস এখন নিত্যদিনের ব্যাপার। চুরি ডাকাতি ছিনতাই যেন স্বাভাবিক ঘটনা। জেনা ব্যাভিচার, অশ্লিলতা সমাজের রেগুলার ফ্যাশন হয়ে গেছে। মোট কথা ফেৎনা-ফ্যাসাদের,পাপ ও পাপাচারে বর্তমান জমানা পরিপূর্ণ। কিন্তু ঈমানের স্বাদ যে পেয়েছে তার কাছে পৃথিবীর সবকিছু অর্থহীন হয়ে পড়ে। এই পৃথিবীর লোভ-লালসা, অর্থ-সম্পদ, গাড়ি, বাড়ি দ্বারা সে আর আকৃষ্ট হয় না। নতুন কোন পণ্য বাজারে বের হলেই সে সেটাকে কেনার জন্য পাগল হয় না। লোক দেখানোর জন্য সে কোন কাজ করে না। অন্যেরা তাকে সম্মান করুক, তার প্রশংসা করুক, তার সিজদা করুক সেটাও সে চায় না। কে তার উপকারে আসবে আর কে তার উপকারে আসবে না এইসব আর তার মাথাব্যথার কারন না। তার ধ্যান-জ্ঞান থাকে শুধু আল্লাহ। মনে রাখতে হবে আল্লাহর تعالىদেওয়া পরীক্ষায় ফেল করলে তার পরিণাম কখনই ভালো হয় না। একারণে কষ্টের সময়গুলো যারা সংবরন করতে পারেন না, তাদের বার বার বোঝাতে হয়, উৎসাহ দিতে হয়, তাগাদা দিতে হয়। না হলে মানুষের ঈমানের ভিত যে কোনো সময় ভেঙ্গে যেতে পারে।  ধৈর্যের বিপরীত হলো রাগ প্রকাশ করা, অভিযোগ করা, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে যাওয়া এবং উৎকন্ঠা ও নৈরাশ্য ব্যক্ত করা। এর কারণে প্রতিদান নষ্ট হয়ে যায় , বিপদ মুসীবত আরো বেড়ে যায় এবং ঈমান হ্রাস পায়।

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

যে নিজেকে মুখাপেক্ষিমুক্ত রাখতে চায়, আল্লাহ তাকে তাই রাখেন; আর যে ব্যাক্তি ধৈর্য ধারণ করে তিনি তাকে ধৈর্যশীলই রাখেন। আর যে ব্যাক্তি পরনির্ভর হতে চায় না, আল্লাহ তাকে অভাবমুক্ত রাখেন। সবর অপেক্ষা বেশি প্রশস্ত ও কল্যাণকর কিছু কস্মিনকালেও তোমাদেরকে দান করা হবে না।৬০২৬।

সংগৃহীত ও সংকলিত

ঈমান পর্ব-৩ শোকর

বিশিষ্ট আলেমগণের অভিমত ঈমান দু’ভাগে বিভক্ত : অর্ধেক শোকর এবং অর্ধেক ছবর। ছবর ও শোকর সেসব সৌভাগ্যবানের জীবনের শ্রেষ্ঠ দিক, যারা কেবল তা আদায়ের মাধ্যমে তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্যে আরোহণ করতে সমর্থ হয়েছেন এবং সেই দুই ডানায় ভর করে জান্নাতুন নাঈমের পথের যাত্রী হয়েছেন।

আল্লাহ বলেন

তারা অনুশোচনা ভরে(আল্লাহর দিকে)প্রত্যাবর্তনকারী, ‘ইবাদাতকারী, আল্লাহর প্রশংসাকারী, রোযাপালনকারী, রুকু‘কারী, সাজদাহকারী, সৎকাজের আদেশ দান কারী, অন্যায় কাজ হতে নিষেধকারী, আল্লাহর নির্ধারিত সীমা সংরক্ষণকারী, কাজেই (এসব) মু’মিনদেরকে সুসংবাদ দাও।সূরা আত তাওবাহ আয়াত ১১২

 

শোকরের পরিচয়

শোকর অর্থ উপকার স্বীকার করা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। অন্তরে নে‘মতদাতা বা অনুগ্রহকারীর ভালবাসা স্থান দান, তার প্রশংসা করা এবং প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে সর্বাবস্থায় আনুগত্যের চেষ্টা করা ও অবাধ্যতা বা নাফরমানী থেকে বিরত থাকাকে শোকর বলে। শোকরের সঙ্গে তিনটি জিনিস জড়িয়ে আছে। অন্তর, জিহবা ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। আল্লাহ প্রদত্ত নে‘মত সমূহের প্রভাব বান্দার অন্তরে প্রকাশ পাবে ঈমান রূপে; মুখে প্রকাশ পাবে প্রশংসা ও গুণগান রূপে এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়ে প্রকাশ পাবে ইবাদত-বন্দেগী ও আনুগত্য হিসাবে।

একজন মুসলিম মহান আল্লাহর পরিচয় পেয়ে থাকে তার নে‘মতের পরিচয় জানার মাধ্যমে। তখন সে আল্লাহকে মন থেকে ভালবাসতে থাকে। আর যখন সে ভালবাসে তখন সে আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে এবং শোকর আদায়ে সচেষ্ট হবে এটাই স্বাভাবিক। আর এভাবেই তা হয়ে যায় ইবাদত। কেননা ইবাদত হ’ল নে‘মতদাতার শোকরের পথ ও পদ্ধতি। সুতরাং আল্লাহর শোকর মানেই আল্লাহর ইবাদত। আর নে‘মতদাতা তো আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নয়। আল্লাহ প্রদত্ত কোন নে‘মতকেই কখনো নগণ্য ও তুচ্ছ ভাবা যাবে না। বান্দাকে আল্লাহ তা‘আলা যে নে‘মতই দেন না কেন তাতে তাকে রাযী-খুশি থাকতে হবে। নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘অল্প পেয়ে যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, বেশীতেও সে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। যে মানুষের (উপকার পেয়ে তার প্রতি) কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, সে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। আল্লাহর নে‘মতের আলোচনা করা কৃতজ্ঞতা এবং আলোচনা না করা অকৃতজ্ঞতা।

তাই আল্লাহ বলেছেন, ‘অতঃপর তুমি তোমার পালনকর্তার অনুগ্রহের কথা বর্ণনা কর’ 

আল্লামা বায়যাভী (রহঃ) বলেন, ‘নে‘মতের শুকরিয়ার উত্তম পদ্ধতি হ’ল যেজন্য নে‘মতকে সৃষ্টি করা হয়েছে তাকে সে কাজে লাগানো’। ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, যে নে‘মত কী তাই চিনল না বরং অজ্ঞ থেকে গেল সে নে‘মতের শুকরিয়া আদায় করেনি। আর যে নে‘মত চিনলেও তা প্রকাশ করেনি সেও শুকরিয়া আদায় করেনি। বর্ণিত আছে যে, দাঊদ (আঃ) একবার বলেছিলেন, – ‘হে আমার রব! আমি কিভাবে আপনার শোকর আদায় করব! আমি যে আপনার শোকর আদায় করছি সেও তো আপনার নে‘মত! তখন আল্লাহ বললেন, দাঊদ, এবারই তুমি আমার শোকর আদায় করলে। অর্থাৎ নে‘মতদাতার শোকর আদায়ে তুমি যে অক্ষমতা স্বীকার করছ এটাই তোমার শোকরের স্বীকৃতি’। ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেছেন, ‘সকল প্রশংসা আল্লাহর যার কোন একটি নে‘মতের শোকর আদায়, আরেকটি নতুন নে‘মত ছাড়া সম্ভব নয়। যেই নে‘মত দ্বারা পূর্বের নে‘মতের শোকর করা যায়। বান্দার উপর আল্লাহর অনুগ্রহরাজির একটি অনুগ্রহেরও বান্দা শোকর আদায়ে সক্ষম নয়। সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি নে‘মতের মোকাবেলায় আমাদেরকে প্রতিদান দিতে বাধ্য করেননি; বরং আমাদের এ বিষয়ে ক্ষমা করেছেন এবং আমাদের দুর্বলতার জন্য দয়া করেছেন। তিনি আমাদের অঢেল নে‘মত দিয়েছেন। অথচ তার মোকাবেলায় অল্প শোকর কবুল করেছেন।

আল-কুরআনে হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর উক্তি উদ্ধৃত হয়েছে-

‘যে ব্যক্তি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে তার নিজের কল্যাণের জন্যই সেটা করে থাকে। আর যে ব্যক্তি অকৃতজ্ঞ হয়, সে জানুক যে আমার পালনকর্তা অভাবমুক্ত ও মহান’ (নামল ২৭/৪০)

হে আল্লাহ আমরা আপনার শোকর আদায়ে নিজেদের অক্ষমতা প্রকাশ করছি এবং যত বেশি সম্ভব শোকর আদায়ের সামর্থ্য প্রার্থনা করছি।

সংগৃহীত ও সংকলিত