Archive for December, 2021

অধিক জ্ঞানী কে?

একদিন জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করলঃ সব মানুষের মধ্যে অধিক জ্ঞানী কে? মূসা “আলাইহিস সালাম-এর জানামতে তার চাইতে অধিক জ্ঞানী আর কেউ ছিল না। তাই বললেনঃ আমিই সবার চাইতে অধিক জ্ঞানী। আল্লাহ তা’আলা এ জবাব পছন্দ করলেন না। এখানে বিষয়টি আল্লাহর উপর ছেড়ে দেয়াই ছিল আদব। অর্থাৎ একথা বলে দেয়া উচিত ছিল যে, আল্লাহ তা’আলাই ভাল জানেন, কে অধিক জ্ঞানী। এ জবাবের কারণে আল্লাহর পক্ষ থেকে মূসা আলাইহিস সালাম-কে তিরস্কার করে ওহী নাযিল হল যে, দুই সমুদ্রের সঙ্গমস্থলে অবস্থানকারী আমার এক বান্দা আপনার চাইতে অধিক জ্ঞানী। একথা শুনে মূসা আলাইহিস সালাম তার কাছ থেকে জ্ঞান লাভের জন্য প্রার্থনা জানালেন। আল্লাহ বলে দিলেন কোথায় পৌছালে সেই বান্দার সাক্ষাত পাওয়া যাবে। যখন তিনি তাঁর সাক্ষাত পেলেন তখন সালাম করে বললেনঃ আমি বনী-ইসরাঈলের মূসা। আমি আপনার কাছ থেকে ঐ বিশেষ জ্ঞান অর্জন করতে এসেছি, যা আল্লাহ তা’আলা আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন। খাদির আলাইহিস সালাম বললেনঃ যদি আপনি আমার সাথে থাকতে চান, তবে কোন বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করবেন না, যে পর্যন্ত না আমি নিজে তার স্বরূপ বলে দেই।



তাঁরা একটি নৌকায় চড়লেন। একটি পাখি উড়ে এসে নৌকার এক প্রান্তে বসল এবং সমুদ্র থেকে এক চঞ্চু পানি তুলে নিল। খাদির ‘আলাইহিস সালাম মূসা আলাইহিস সালাম-কে বললেনঃ আমার জ্ঞান এবং আপনার জ্ঞান উভয়ের মিলে আল্লাহ্ তা’আলার জ্ঞানের মোকাবিলায় এমন তুলনাও হয় না, যেমনটি এ পাখির চঞ্চর পানির সাথে রয়েছে সমুদ্রের পানি।

ঐ সাক্ষাতে আমরা তিনটি ঘটনা দেখতে পাই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা বর্ণনা করে বলেনঃ মূসা ‘আলাইহিস সালাম-এর প্রথম আপত্তি ভুলক্রমে, দ্বিতীয় আপত্তি শর্ত হিসেবে এবং তৃতীয় আপত্তি ইচ্ছাক্রমে হয়েছিল। মুসা আলাইহিস সালাম যদি আরো কিছুক্ষণ ধৈর্য ধরতেন, তবে আরো কিছু জানা যেত।



ঘটনা একঃ



নৌকায় আরোহন শেষে খাদির ‘আলাইহিস সালাম কুড়ালের সাহায্যে নৌকার একটি তক্তা তুলে ফেললেন। এতে মূসা ‘আলাইহিস সালাম (স্থির থাকতে না পেরে) বললেনঃ তারা কোন প্রকার পারিশ্রমিক ছাড়াই আমাদেরকে নৌকায় তুলে নিয়েছে। আপনি কি এরই প্রতিদানে তাদের নৌকা ভেঙ্গে দিলেন যাতে সবাই ডুবে যায়? এতে আপনি অতি মন্দ কাজ করলেন। খাদির বললেনঃ আমি পূর্বেই বলেছিলাম, আপনি আমার সাথে ধৈর্য ধরতে পারবেন না। তখন মূসা “আলাইহিস সালাম ওযর পেশ করে বললেনঃ আমি ওয়াদার কথা ভুলে গিয়েছিলাম। আমার প্রতি রুষ্ট হবেন না।



ঘটনা দুই



অতঃপর তারা নৌকা থেকে নেমে সমুদ্রের তীর ধরে চলতে লাগলেন। হঠাৎ খাদির একটি বালককে অন্যান্য বালকের সাথে খেলা করতে দেখলেন। খাদির স্বহস্তে বালকটির মস্তক তার দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিলেন। বালকটি মারা গেল। মূসা আলাইহিস সালাম বললেনঃ আপনি একটি নিষ্পাপ প্রাণকে বিনা অপরাধে হত্যা করেছেন। এ যে বিরাট গোনাহর কাজ করলেন। খাদির বললেনঃ আমি তো পূর্বেই বলেছিলাম, আপনি আমার সাথে ধৈর্য ধরতে পারবেন না। মূসা “আলাইহিস সালাম দেখলেন, এ ব্যাপারটি পূর্বের চাইতেও গুরুতর। তাই প্রশন করে ফেলেছিলেন। তবু বললেনঃ এরপর যদি কোন প্রশ্ন করি তবে আপনি আমাকে পৃথক করে দেবেন। আমার ওযর-আপত্তি চূড়ান্ত হয়ে গেছে।



ঘটনা ৩



অতঃপর আবার চলতে লাগলেন। এক গ্রামের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় তারা গ্রামবাসীদের কাছে খাবার চাইলেন। ওরা সোজা অস্বীকার করে দিল। খাদির এই গ্রামে একটি প্রাচীরকে পতনোন্মুখ দেখতে পেলেন। তিনি নিজ হাতে প্রাচীরটি সোজা করে দিলেন। মূসা আলাইহিস সালাম বিস্মিত হয়ে বললেনঃ আমরা তাদের কাছে খাবার চাইলে তারা দিতে অস্বীকার করলো। অথচ আপনি তাদের এত বড় কাজ করে দিলেন; ইচ্ছা করলে এর পারিশ্রমিক তাদের কাছ থেকে আদায় করতে পারতেন। খাদির বললেনঃ অর্থাৎ এখন শর্ত পূর্ণ হয়ে গেছে। এটাই আমার ও আপনার মধ্যে বিচ্ছেদের সময়।



এরপর খাদির উপরোক্ত ঘটনাত্ৰয়ের স্বরূপ মূসা আলাইহিস সালাম-এর কাছে বৰ্ণনা করে বললেনঃ



নৌকাটির ব্যাপারে-সেটি ছিল কয়েকজন দরিদ্র ব্যক্তির। তারা সমুদ্রে জীবিকা অন্বেষন করত। আমি ইচ্ছা করলাম যে, সেটিকে ক্রটিযুক্ত করে দেই। তাদের অপরদিকে ছিল এক বাদশাহ। সে বলপ্রয়োগে প্রত্যেকটি নৌকা ছিনিয়ে নিত।



যে বালককে আমি হত্যা করেছিলাম, সে কাফের হিসেবে লিখা হয়েছিল। যদি বড় হওয়ার সুযোগ পেত তবে পিতা-মাতাকে কুফারী ও সীমালংঘনের মাধ্যমে কষ্ট দিয়ে ছাড়ত।



আর ঐ দেয়ালটির বিষয় হল- তা ছিল ঐ শহরের দু’জন ইয়াতীম বালকের। তার নীচে ছিল তাদের জন্য রক্ষিত ধন, তাদের পিতা ছিল এক সৎ ব্যক্তি। তাই আল্লাহ চাইলেন তারা দু’জন যৌবনে উপনীত হোক আর তাদের গচ্ছিত ধন বের করে নিক। এ সব আমি নিজের পক্ষ থেকে করিনি।



এ হল সে বিষয়ের ব্যাখ্যা যে সম্পর্কে আপনি ধৈর্য ধারণ করতে পারেননি।