“লা ইকরাহা ফিদ্দীন”: দ্বীনের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি নেই

মুসলমান হওয়ার জন্য কারো উপরই কোন বাধ্যবাধকতা নেই। “লা ইকরাহা ফিদ্দীন” কোরআনের এই বহুল প্রচারিত আয়াতের অর্থ হলঃ দ্বীনের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি নেই। নবীজী (সাঃ)র আমলেও আরবের হাজার হাজার মানুষ অমুসলমান থেকেছে। মিশর, লেবানন, ইরাকসহ আরব দেশগুলির লক্ষ লক্ষ মানুষ আজও যে অমুসললিম, –তারা তো তাদেরই বংশধর। কোন মুসলিম সেনাবাহিনী কোন কালেই তাদেরকে মুসলিম হতে বাধ্য করেনি। কিন্তু যারা জেনে বুঝে মুসলিম হয় তাদের মাথার উপর অলংঘনীয় দায়িত্বও এসে যায়। অনেকটা সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার মত। সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে কাউকে বাধ্য করা হয় না। কিন্তু যোগ দিলে সেনাবাহিনীর বাইরের লোকদের থেকে তার দায়িত্বটা ভিন্নতর হয়। তখন প্রাণ হাতে রণাঙ্গণে যাওয়াটি তার মৌলিক দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে এসে যায়। যুদ্ধে না গেলে বা নির্দেশ পালনে অবাধ্যতা দেখালে তার কোর্টমার্শাল হয়। বিচারে কঠোর শাস্তি হয়, এমনকি প্রাণদন্ডও হয়। প্রশ্ন হলো, মুসলমান হওয়ার পর সে বাধ্যবাধকতাটি কি? সেটি হলো, মহাশক্তিমান আল্লাহতায়ালার সাথে এক অলংঘনীয় চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া এবং চুক্তিটি হলো, একমাত্র আল্লাহতায়ালাকে সে মাবুদ বা উপাস্য রূপে মেনে নিবে এবং নিজে তাঁর একান্ত দাসরূপ প্রতিটি হুকুমকে প্রতিনিয়ত মান্য করে চলবে। সেটি শুধু নামায-রোযা-হজ্জ-যাকাতের ন্যায় ইবাদতে নয়, বরং যেখানেই আল্লাহর হুকুম তাকে তৎক্ষনাৎ সঁপে দিতে হবে সে হুকুমের প্রতিপালনে। আল্লাহর হুকুম প্রতিপালনের দায়িত্ববোধ তাকে সর্বক্ষণ নিবিষ্ট করবে সে হুকুমের অনুসন্ধানে। অনুসন্ধানের সে কাজটি প্রতিটি ঈমানদারের উপর ফরয। কারণ, আল্লাহর হুকুমটি যে জানে না, সে ব্যক্তি হুকুমের অনুসরণ করবে কি করে? কোরআনের জ্ঞানার্জন এ জন্যই ফরয। অজ্ঞতা একারণেই সবচেয়ে ভয়ানক কবীরা গুনাহ। অজ্ঞতা নিয়ে তাই মুসলমান হওয়া যায় না, মুসলমান থাকাও যায় না। পথের অজ্ঞতা নিয়ে সঠিক রাস্তায় পথচলা অসম্ভব। এখানে যেটি অনিবার্য সেটি পথভ্রষ্টতা। ধর্মীয় জ্ঞানের অজ্ঞতা নিয়ে তেমনি অসম্ভব হলো আল্লাহর প্রদর্শিত সিরাতুল মোস্তাকিমে চলা। তাছাড়া মুসলমানের দায়িত্ব শুধু এ নয় যে, সে শুধু নিজে বা পরিবারকে নিয়ে সিরাতুল মোস্তাকিমে চলবে। সেটি নবীজী (সাঃ)র সূন্নত নয়, সাহাবায়ে কেরামেরও রীতি নয়। তাকে পথ দেখাতে হয় অন্যদেরও। পথ দেখা ও দেখানো, জাগা ও জাগানোই তার জীবনের মিশন। সে সাথে সরাতে হয় রাষ্ট্রের বুক থেকে সত্যের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠিত প্রতিটি বাধা এবং শয়তানী শক্তির প্রতিটি প্রতিষ্ঠান। নবীজী শুধু কাবার মধ্য থেকে মুর্তি সরাননি, সরিয়েছেন কাবার বাইরে থেকেও। মদ্যপান, সূদ-ঘুষ, বেশ্যাবৃত্তিসহ পাপের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান নির্মূল করেছেন। কারণ পাপের রাজ্যে আল্লাহর দ্বীনের বিজয় অসম্ভব।

Collected & Concised

Leave a comment