ইমাম আল গাজ্জালি (রহ•)
বিশিষ্ট মুসলিম মনীষী, বিশ্বের অন্যতম ইসলামী চিন্তাবিদ ইমাম আল গাজ্জালি (রহ•) আব্বাসীয় যুগে যে ইসলামী সভ্যতার পূর্ণ বিকাশ ঘটিয়েছিলেন তা অবিস্মরণীয়। তার আবির্ভাবে ইসলামের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে এক নবযুগের সূচনা হয়।
আবু হামিদ মুহাম্মদ আল গাজ্জালি ৪৫০ হিজরি সালে পারস্যের তুস নগরে জন্মগ্রহণ করেন। তার নাম ছিল মুহাম্মদ। তার বাবা সুতার ব্যবসা করতেন। গাযাল শব্দের অর্থ হচ্ছে সুতা বিক্রেতা। শৈশবেই তার পিতাকে হারিয়ে তিনি আত্মীয়-স্বজনের কাছে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হন। ইমাম আল গাজ্জালি (রহ•) তৎকালীন যুগের শ্রেষ্ঠতম ধর্মতত্ত্ববিদ আলেম ইমামুল হারামাইন আল জুয়াইনির কাছে কয়েক বছর অতিবাহিত করেন। আব্বাসীয় খিলাফতের তুর্কি সুলতান মালিক শাহের প্রভাবশালী উজির নিজামুল মূলক তার প্রতিভায় মুগ্ধ হন। তিনি তাকে বাগদাদের বিখ্যাত নিজামিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষের পদে নিযুক্ত করেন। সে সময় তার বয়স ছিল মাত্র ৩৪
বছর। ইতিপূর্বে এত অল্প বয়সে কেউ নিজামিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষের পদ লাভ করেননি। এভাবে গাজ্জালি অল্প বয়সে সমসাময়িক শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক জগতে বিশিষ্ট পদমর্যাদা লাভ করেন।
ইমাম আল গাজ্জালি ছিলেন মুসলিম বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দার্শনিক। তার চিন্তাধারাকে মুসলিম ধর্মতত্ত্বের বিবর্তন বলে ধরা হয়। ফালাসিফা বা দার্শনিকদের বিরুদ্ধে তিনি বলেন- দার্শনিক মতবাদ কখনও ধর্মীয় চিন্তার ভিত্তি হতে পারে না। প্রয়োজনীয় সত্য সম্পর্কে শুধু ওহির জ্ঞান পাওয়া সম্ভব। তিনি সমকালীন দার্শনিকদের দর্শন-চিন্তার অপূর্ণতা দেখতে পান এবং তাদের সমালোচনা করেন। তাহাফাতুল ফালাসিফা গ্রন্থে তিনি দার্শনিকদের চিন্তার শূন্যতা প্রমাণ করেন। ইমাম গাজ্জালি (রহ•) প্রায় চারশ’ গ্রন্থ রচনা করেন। তার কয়েকটি প্রসিদ্ধ গ্রন্থের নাম উল্লেখ করা হলঃ
১• এহইয়া উলুমুদ্দীন
২• তাহাফাতুল ফালাসিফা
৩• কিমিয়ায়ে সা’আদাত
৪• হাকিকাতুর রুহু
৫• দাকায়েকুল আখবার
৬• আসমাউল হুসনা
৭• ফাতাওয়া প্রভৃতি।
অল্পদিনের মধ্যেই তিনি ইসলামের ধর্মীয় শাস্ত্রের ওপর গভীর পাণ্ডিত্য লাভ করেন। তার গভীর বিদ্যাভাণ্ডারের পরিচয় পেয়ে সেলজুক বংশের সুলতান মালিক শাহের উজির নিজাম উল মূলক তাকে বাগদাদের নিজামিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষের পদে নিযুক্ত করেন। যথার্থ জ্ঞান লাভের জন্য ইমাম গাজ্জালি সুফি মতবাদে দীক্ষিত হন। তিনি দেখতে পেলেন, সুফিতত্ত্বের মাধ্যমেই জীবন, জগৎ এবং স্রষ্টা সম্বন্ধে অধিক ধারণা লাভ করা যায়। তিনি সমকালীন বিভিন্ন দার্শনিকের মতবাদগুলো সূক্ষ্ম দৃষ্টি সহকারে যাচাই করেন এবং যুক্তিপূর্ণ সিদ্ধান্তে উপনীত হন। তিনি দর্শনশাস্ত্রের আলোচনায় সর্বাপেক্ষা মৌলিকতার পরিচয় দান করেছেন। তিনি আরবি ও ফার্সি ভাষায় বহু গ্রন্থ রচনা করেন।
Permission is taken from Source http://prothom-aloblog.com/users/base/lovelu1977/